এককথায় বলতে গেলে আধুনিক সভ্যতার ধ্যান-ধারণা এবং সংস্কৃতি তথা পুরো সভ্যতাটাই ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটা ব্যাখ্যা করার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে আধুনিক সভ্যতার চিন্তাদর্শন, রীতিনীতি তথা আজকের বিশ্বায়নের সংস্কৃতিকে পর্যালোচনা করা, যার দ্বারা আমরা সবাই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত।
এটা পরিস্কার, আর যাইহোক আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য তাওহিদ নয়, বরং তাওহিদের সম্পূর্ণ উল্টো। এটাকে শিরক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কিন্তু শিরক শব্দটার চেয়ে এখানে তাকছির শব্দের ব্যবহার বেশি সঙ্গত হবে। তাওহিদের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে: কোনোকিছুকে এক বানানো, আর পারিভাষিক অর্থে: সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহর একত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাকছিরের আভিধানিক অর্থ: জিনিসকে বহু হিসেবে সাব্যস্ত করা। আধুনিক সভ্যতার কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্র, দিক, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নেই। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট মূলনীতি, জীবনদর্শন। অন্যকথায় এখানে নির্দিষ্ট কোনো ঈশ্বর নেই। আধুনিক বিশ্ব বহু ঈশ্বরের পূঁজো করে। আর এই বহু ঈশ্বরের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। লোকদের কাছে যেটাই আবেদনময়ী হয়, সেটাকেই তারা ঈশ্বর হিসেবে পূঁজো করে এবং একইসাথে তারা বহু ঈশ্বরের পূঁেজা করে। আমার এই কথার সত্যতা ধরা পড়বে যখন পশ্চিমা বিশ্ব জগতের সাথে মোটামুটি ১৮৫০ সাল পর্যন্ত চলে আসা ইসলামি সভ্যতাকে আমরা তুলনা করবো। ইসলামি সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য তাওহিদের চূড়ান্ততা। চিন্তার ঐক্য, সামঞ্জস্যতা, ভারসাম্য হচ্ছে প্রধান নিয়ামক। বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদগন একইসাথে বহু জ্ঞান ও বিদ্যায় পারদর্শী হতেন এবং তারা এসমস্ত জ্ঞানকে একই গাছের বিভিন্ন শাখা হিসেবে বিবেচনা করতেন।
এই গাছটি হচ্ছে তাওহিদের বৃক্ষ। ফলে জোতিষবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা চর্চা, কিংবা পদার্থবিদ্যা ও নৈতিকতা, গণিত ও আইন বা আধ্যাত্মবাদের চর্চা কখনো সাংঘর্ষিক হত না। যেহেতু সবকিছুই মহান আল্লাহর সর্বব্যাপী বাস্তবতায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে।
কিন্তু আধুনিক পশ্চিমা বিশ্ব এটার সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমানের আধুনিক পন্ডিতেরা কোনো ক্ষুদ্র একটি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকেন। দিনদিন তথ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেটার সাথে তাল মিলিয়ে শাখা-প্রশাখার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাতে কোনো ঐক্য নেই, বরং একই শাখাতে বিদ্যমান উপশাখার লোকেরা পুরো শাখা সম্পর্কে আদৌ কোনো ধারণা রাখে না। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে তো একটি সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ঐক্যে নিয়ে আসাটা বাতুলতা মাত্র। এতো বিশৃঙ্খলা থাকা সত্তে¡ও প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব ঈশ্বরের পূঁেজা করে। শূন্যতা আর হাহাকার নিয়ে তো কেউই তার জীবন অতিবাহিত করতে পারে না। তাকে কোনো না কোন লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আশা, বাসনা, স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে হয়। আধুনিক লোকেরা সেসব জিনিসেরই পূঁেজা করে যারা তাদের জীবনে আশা, উদ্দীপনা, উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য প্রদান করে। প্রাচীন পূঁেজার মূর্তি এবং আধুনিকতার পূঁজিত ঈশ্বরের মধ্যকার প্রধান পার্থক্য হচ্ছে: আধুনিকতার এসব ছোট ছোট ঈশ্বরকে কোনো একটি চূড়ান্ত ঈশ্বরের আওতায় আনা সম্ভব নয়। আর যদি সম্ভবও হয়, তখন সেই চূড়ান্ত ঈশ্বর হয় কোনো না কোনো মতাদর্শের দ্বারা উৎপাদিত। মতাদর্শের দ্বারা উৎপাদিত এই ঈশ্বর তাওহিদের নয়। তাকছিরের ঈশ্বরের সংখ্যা সীমাহীন। এদের প্রধান ঈশ্বরদেরকে উল্লেখ করতে গেলে লম্বা তালিকার প্রয়োজন হবে। এই প্রধান ঈশ্বররা হলেন: বিবর্তন, উন্নতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মার্কসবাদ, স্বাধীনতা, সমতা।
কিন্তু সবচেয়ে বিপদজনক ঈশ্বর হচ্ছেন তারা, যাদেরকে চিহ্নিত করাটাই দুষ্কর। কেননা আমরা সেসবকে অনেকটা পানি-বাতাসের মতো নিত্য ব্যবহার্য বস্তু হিসেবেই গ্রহণ করেছি। চলুন আমরা এই ঈশ্বরদেরকে চিহ্নিত করি: মৌলিক অধিকার , দায়িত্ব , যোগাযোগ, ভোগ , উন্নয়ন, শিক্ষা , শক্তি , লেনদেন , ভবিষ্যৎ , বৃদ্ধি , উপাদান , স্বকীয়তা , তথ্য (রহভড়ৎসধঃরড়হ), জীবনযাত্রার মান (ষরারহম ংঃধহফধৎফ), ব্যবস্থাপনা (সধহধমবসবহঃ), কাঠামো (সড়ফবষ), আধুনিকায়ন (সড়ফবৎহরুধঃরড়হ), পরিকল্পনা (ঢ়ষধহহরহম), উৎপাদন (ঢ়ৎড়ফঁপঃরড়হ), প্রগতি (ঢ়ৎড়মৎবংং), প্রকল্প (ঢ়ৎড়লবপঃ), কাঁচামাল (ৎধি সধঃবৎরধষ), সম্পর্ক (ৎবষধঃরড়হংযরঢ়), সম্পদ (ৎবংড়ঁৎপব), ভূমিকা (ৎড়ষব), সেবা , যৌনতা, সমাধান, সিস্টেম, কল্যান, কর্ম ।
এগুলো হচ্ছে আধুনিক ঈশ্বরের সুন্দরতম ৯৯ নাম। এগুলোর জপ করাটাই আধুনিক মানুষের যিকির।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এইসব শব্দের সুনির্দিষ্ট কোনো অর্থ নেই বরং এদের জ্ঞাতার্থ আছে। আমরা এদেরকে বরং প্লাস্টিক শব্দ হিসেবে আখ্যায়িত করবো। এই প্লাস্টিক শব্দসমূহকে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে, যারাই এদেরকে ব্যবহার করে তারা সম্মান লাভ করে। দায়িত্ব, যোগাযোগ , ভোগ, উন্নয়ন, তথ্য এ প্লাস্টিক শব্দগুলোকে ব্যবহার করে, তারাই সম্মান, মর্যাদা যশ, খ্যাতি লাভ করে, যেহেতু সে ভালো এবং সত্যের কথা বলছে। এই শব্দগুলো অন্যদেরকে চুপ করিয়ে দেবে। এমন কোন গাঁধা আছে যারা দায়িত্ব ও উন্নয়ন এর বিরোধিতা করবে?
যেসব মুজতাহিদ এসব মিনি-ঈশ্বরের ব্যাপারে কথা বলেন, তারা হলেন: বিশেষজ্ঞ। প্রতিটি প্লাস্টিক শব্দ একটি রোল-মডেল স্থাপন করে এবং আমাদেরকে এটা ভাবতে উৎসাহিত করা হয়, কেবল বিশেষজ্ঞরাই এটা অর্জন করতে পারে। তাই আমাদের জীবনকে তাদের হাতে বিশ্বাস করে তুলে দিতে হবে। আমাদেরকে এই বৈজ্ঞানিক মুজতাহিদদের শাসন মেনে নিতে হবে, এবং এরা আমাদের স্বাস্থ্য, কল্যাণ, শিক্ষার জন্য শরীয়াহ প্রণয়ন করবে। লোকজন তাদের সিদ্ধান্তকে ফতওয়া হিসেবে মূল্যায়ন করে। যদি বিশেষজ্ঞরা ইজমার মাধ্যমে একমত হয় যে, উন্নয়ন নামক ঈশ্বরের ভোগ হিসেবে একটি গ্রামকে ধ্বংস করতে হবে, তবে আমাদেরকে সেটা মানা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আর এই মুজতাহিদরাই বিশেষত সবচেয়ে ভালো জানেন।
প্রতিটি প্লাস্টিক শব্দ অন্য শব্দকে সেকেলে এবং প্রাচীন হিসেবে চিহ্নিত করে। আমরা এসব ঈশ্বরদেকে পূঁজো করে গর্ববোধ কতে পারি আর আমাদের সকল বন্ধু-বান্ধব এবং কলিগরা আমাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করবে। আর যারা আগের পুরাতন ঈশ্বরকে পূঁেজা করে তারা সেটাকে ঢেকে দিতে পারে পুরাতনের সাথে নতুন ঈশ্বরকে একত্রে পূঁেজার মাধ্যমে। আবার এমন অনেক লোকই আছে যারা আগের পুরাতন ঈশ্বরের শি
Title |
কুরআন অধ্যয়নের মৌলিক পদ্ধতি |
Author |
শায়খ ইমরান নযর হোসেন |
Publisher |
মুসলিম ভিলেজ |
Edition |
New edition |
Number of Pages |
160 |
Country |
Bangladesh |
Language |
Bengali |
Weight |
358 Gram |
Dimension |
21cm x 15cm x 1cm |