ইসলামি ইলমের উৎস কুরআন ও হাদিস থেকে ইলমের একাধিক শাখা বের হয়েছে। কতক ইলম মৌলিক যেমন ‘ইলমে তাফসির’, ‘ইলমে হাদিস’, ‘ইলমে তাওহিদ’ ও ‘ইলমে ফিকহ’। আর কতক সম্পূরক ও সাহায্যকারী ইলম যেমন ‘উসুলে হাদিস’, ‘উসুলে ফিকাহ’ ও ‘উসুলে তাফসির’ ইত্যাদি। ‘উসুলে হাদিস’ হাদিসের সুরক্ষাদানকারী ইলম। যে উসুলে হাদিস জানে না, সে নিজে ভুল করে ও অপরের ভুলের কারণ হয়, হোক সে মুফাসসির, ফকিহ বা ওয়ায়েজ। কতক মুফাসসির হাদিস দ্বারা তাফসির করেন, অথচ তার হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। কতক ফকিহ দুর্বল ও জাল হাদিস থেকে মাসআলা বলেন। কতক নীতিশাস্ত্রবিদ দুর্বল ও জাল হাদিস থেকে নীতি তৈরি করেন। কতক ওয়ায়েজ, যারা স্বীয় ধারণায় মানুষদেরকে হিদায়েতের প্রতি আহ্বান করেন, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা বলেন, যা তিনি বলেননি তাই প্রচার করেন তার নামে। এভাবে তারা নিজেরা গোমরাহ হন ও অপরকে গোমরাহ করেন! আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبٗا لِّيُضِلَّ ٱلنَّاسَ بِغَيۡرِ عِلۡمٍۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٤٤ ﴾ [الانعام: ١٤٤]
“সুতরাং তার চেয়ে অধিক জালেম কে, যে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিনা দলিলে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়? নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়েত করেন না”।[1] নবী সাল্লল্লাহু সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
«إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»
“নিশ্চয় আমার উপর মিথ্যা বলা, কারো উপর মিথ্যা বলার মত নয়, যে আমার উপর মিথ্যা বলল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়”।[2]
হাদিস শাস্ত্র না-জানার কারণে তারা আল্লাহ্ ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা বলেন। এমন আমলের প্রতি আহ্বান করেন, যার উপর শরীয়ত নাযিল হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ »
“যে এমন আমল করল, যার উপর আমাদের আদর্শ নেই তা পরিত্যক্ত”।[3] অতএব তাদের আমল বাতিল, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মোতাবেক নয়।
ভারত উপমহাদেশে সঠিকভাবে হাদিস চর্চাকারিগণ জানেন অত্র ভূখণ্ডে হাদিস শাস্ত্রের দুরবস্থা কেমন। এ অবস্থা দশ-বিশ বছর হাদিসের দরস দানকারী কথিত মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদিস ও হাদিস বিশারদদের, তাদের ছাত্র বা সাধারণের কথা বলাইবাহুল্য। যে কারণে দীনের নামে বেদীন, সুন্নতের নামে বিদআত, সংস্কারের নামে কুসংস্কার ও তাওহিদের নামে শির্কের ছড়াছড়ি অত্র ভূখণ্ডে। তাই ইমান ও আকিদার সুরক্ষা এবং সুন্নত প্রতিষ্ঠার জন্য উসুলে হাদিস চর্চা ব্যাপক করার বিকল্প নেই। বৈষয়িক বিষয়াদির ন্যায় সবাই তাদের দীনের ব্যাপারে সতর্ক হোক, সহি হাদিসসমূহ গ্রহণ করুক এবং সচেতনভাবে দুর্বল হাদিসগুলো পরিহার করুক, এ মহান উদ্দেশ্যে আমাদের অত্র প্রয়াস।
‘হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি’ বইখানা মৌলিক গ্রন্থ নয়, বাইকুনি রাহিমাহুল্লাহ্ রচিত المنظومة البيقونية এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ, যা তিনি হাদিসের প্রাথমিক স্তরের ছাত্রদের জন্য রচনা করেছেন। শায়খ ওমর ইব্ন মুহাম্মদ বাইকুনি রাহিমাহুল্লাহ্ হাদিস শাস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার থেকে গুরুত্বপূর্ণ কতক প্রকার অতি সহজ, সাবলীল ও প্রাঞ্জলভাষায় এতে জমা করেছেন, যা চৌত্রিশটি পঙ্ক্তিতে সীমাবদ্ধ। আরব বিশ্বের অধিকাংশ মুহাদ্দিস তাদের ছাত্রদেরকে প্রথমপাঠ হিসেবে বইটি পাঠদান করেন। একাধিক বিখ্যাত মুহাদ্দিস তার ব্যাখ্যা লিখেছেন, যা তার গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ।[4]
এ কিতাবের প্রথম লক্ষ্য হাদিসের ছাত্রগণ, তবে সাধারণ শিক্ষিত সমাজ যেন বইটি পাঠ করে উপকৃত হন, সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। তাই বইটি আহলে ইলম, হাদিসের ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষিত সবার উপযোগী। বইটি পড়লে উসুলে হাদিসের পরিভাষা ও তার সংজ্ঞা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হবে। আরো জানা যাবে যে, মানুষের কথা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী পৃথক করার জন্য মুহাদ্দিসগণ হাদিসকে নানাভাবে পরখ করেছেন, বিভিন্ন পর্যায়ে তার উপর গবেষণা পরিচালনা করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকার গবেষণার পৃথক নাম দিয়েছেন।
Title |
মিন আত্বইয়াবিল মানহি ফী ইলমিল মুসত্বালাহ |
Author |
আব্দুল করীম মুরাদ |
Publisher |
তাওহীদ পাবলিকেশন্স |
Edition |
New edition |
Number of Pages |
144 |
Country |
Bangladesh |
Language |
Bengali |
Weight |
150 Gram |
Dimension |
21cm x 15cm x 1cm |