২০১৩ সালের জানুয়ারীতে তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা প্রথম প্রকাশের পর দীর্ঘ বিরতি শেষে ২৯তম পারার তাফসীরের ৩য় সংস্করণ বের হবার এ শুভ মুহূর্তে সর্বাগ্রে আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাদের মাধ্যমে তাফসীরের এ দুরূহ কাজটি করিয়ে নিলেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ ওয়াল মিন্নাহ। উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের জানুয়ারী, মে ও নভেম্বরে ৩০তম পারার ৩টি সংস্করণ বের হয়েছে। ২৯তম পারার তাফসীরটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী ও ডিসেম্বরে দু’টি সংস্করণ বের হয়েছে। বর্তমানে ৩য় সংস্করণ বের হ’তে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২৯তম পারায় মোট ১১টি সূরার তাফসীর করা হয়েছে। সবগুলি মাক্কী সূরা। সূরা সমূহের অবতরণ পরম্পরা গৃহীত হয়েছে তাফসীর কাশশাফ থেকে।
তাফসীরে গৃহীত নীতিমালা : (১) প্রথমে সমার্থবোধক কুরআনের অন্যান্য আয়াতসমূহ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অতঃপর (২) ছহীহ হাদীছ দ্বারা। অতঃপর প্রয়োজনে (৩) আছারে ছাহাবা ও তাবেঈনের ব্যাখ্যা দ্বারা, যা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। (৪) তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত অর্থাৎ আল্লাহ্র নাম ও গুণাবলী বিষয়ে ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ ও তাঁদের গৃহীত নীতিমালার অনুপুঙ্খ অনুসরণের সাধ্যমত চেষ্টা করা হয়েছে। যে বিষয়ে প্রাচীন ও আধুনিক বহু মুফাসসিরের পদস্খলন ঘটেছে। (৫) মর্মগত ইখতেলাফের ক্ষেত্রে তাফসীরের সর্বস্বীকৃত মূলনীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং সর্বাগ্রগণ্য ও প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। (৬) তরজমার ক্ষেত্রে সাবলীল ও সহজবোধ্য বাংলায় কুরআনের উদ্দিষ্ট মর্ম সাধ্যমত স্পষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ যেখানে নিজের ক্ষেত্রে ‘আমরা’ বলেছেন, সেখানে ‘আমরা’ অনুবাদ করা হয়েছে। এটি আরবী বাকরীতিতে মর্যাদাবোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যেখানে আল্লাহ ‘আমি’ বলেছেন, সেখানে তরজমায় ‘আমি’ লেখা হয়েছে। (৭) ক্ষেত্র বিশেষে আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। (৮) আয়াতের সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক দিকগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (৯) তাফসীরের সর্বত্র অতি যুক্তিবাদী মু‘তাযেলা এবং চরমপন্থী খারেজী ও শৈথিল্যবাদী মুর্জিয়া আক্বীদা সমূহের বিপরীতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত আহলেহাদীছের মধ্যপন্থী আক্বীদা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (১০) বিদ্বানগণের অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং প্রবৃত্তিপরায়ণদের স্বেচ্ছাকৃত ব্যাখ্যাসমূহ থেকে প্রয়োজনীয় স্থানসমূহে পাঠককে সতর্ক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, অত্র গ্রন্থে মিশকাত বলতে শায়েখ মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী (১৯১৪-১৯৯৯ খৃ.)-এর তাহকীককৃত মিশকাত ও তার ক্রমিক সংখ্যা সমূহ বুঝানো হয়েছে। যদিও উক্ত ক্রমিক সংখ্যায় ভুল আছে। যেমন ৫৯৬৪-এর স্থলে ৫৯৭৩ হবে। এভাবে শেষ সংখ্যা ৬২৮৫ পর্যন্ত। তাতে মোট ৯ (নয়)-টি হাদীছ ক্রমিক সংখ্যার হিসাবে কম হয়েছে। ফলে মোট হাদীছ সংখ্যা হবে বর্তমানে ৬২৮৫-এর স্থলে ৬২৭৬-টি। মাঝে ৬২৬৪ ক্রমিকে ৬৬২৪ লেখা হয়েছে।
৩য় সংস্করণে কিছু সংশোধনী এসেছে। তবে সম্পূর্ণ নতুনভাবে যোগ হয়েছে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ (১৮৬৮-১৯৬৮ খৃ.)-এর তাফ্ছীরুল কোর্আন। সেখান থেকে অনেক উপকার পেয়েছি। কিন্তু সঙ্গত কারণেই আক্বীদাগত বিষয়ে কিছু প্রতিবাদও এসেছে। যা সত্যসন্ধ পাঠকের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং পরকালের রাস্তা সুগম হবে ইনশাআল্লাহ।
৩য় সংস্করণে গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এটাই স্বাভাবিক। ১ম সংস্করণে ছিল ২০৮ পৃ. ২য় সংস্করণে ৩৫২ পৃ. এখন ৩য় সংস্করণে হ’ল ৩৬৮ পৃ.। সাথে ২য় সংস্করণের ন্যায় মূল আয়াত সমূহে লাল কালি থাকছে।
প্রচলিত কুরআনে আবু আব্দুল্লাহ সাজাওয়ান্দী গযনভী (মৃ. ৫৬০ হি.) কৃত ওয়াক্বফের ২১টি চিহ্ন রয়েছে। যথা قلا ل صلے صل مع وقفه قف ك ق ص ه لا ز ج ط م ﭕ কিছু ওয়াক্বফের চিহ্ন কুরআনের পার্শ্বে লেখা আছে। যেমন صلعم، وقف النبي وقف جبريل، وقف غفران ইত্যাদি। উপরোক্ত চিহ্ন সমূহের মধ্যে ط م ج ﭕ চারটি চিহ্ন ব্যতীত অন্যগুলি সম্পর্কে ক্বিরাআত শাস্ত্রবিদগণ কোনটিতে ওয়াক্বফ না করা উচিৎ, করলে কোন ক্ষতি নেই, ওয়াক্বফ করা অপেক্ষা না করাই ভাল ইত্যাদি বলেছেন। আমরা পাঠকদের সুবিধার্থে উপরোক্ত চারটি চিহ্ন রেখে বাকী সব বাদ দিয়েছি। এছাড়া হাফেয ছাহেবদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, তারা যেন ইমামতি করার সময় রুকূ ভিত্তিক তেলাওয়াত করেন, পৃষ্ঠা ভিত্তিক নয়। কেননা তাতে প্রসঙ্গের বিকৃতি ঘটে। সেকারণ প্রসঙ্গের শেষ নির্দেশ করার জন্য বিরতি চিহ্নগুলি লাল ﭔ করা হয়েছে।
এছাড়া س ش-এর তিনটি শশা ও ص ض-এর একটি শশা স্পষ্ট করে শব্দগুলি লেখা হয়েছে। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় তাশদীদ বাদ দেওয়া হয়েছে। যেমন হাফেযী কুরআনে রয়েছে, اَ لَمْ اَقُلْ لَّکُمْ (ক্বলম ৬৮/২৮)। এখানে لَّکُمْ-এর তাশদীদ বাদ দেওয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে اَلَمْ نَخْلُقْکُّمْ مِّنْ (মুরসালাত ৭৭/২০)। এখানে مِّنْ -এর তাশদীদ বাদ দেওয়া হয়েছে।
নিঃস্বার্থ এ লেখনীকে আল্লাহ নাচীয লেখকের ও তার পরিবারবর্গের এবং তার মরহূম পিতা-মাতার জান্নাতের অসীলা হিসাবে কবুল করুন! অনিচ্ছাকৃত ভুল সমূহের জন্য সর্বদা ক্ষমাপ্রার্থী।
পরিশেষে অত্র তাফসীর গ্রন্থ প্রকাশে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ও সহযোগী সকলকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ তাদেরকে ইহকালে ও পরকালে উত্তম জাযা দান করুন- আমীন!